ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইউসিএল জয় পিএসজির

দৈনিক রূপরেখা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৫


পিএসজির ইতিহাস গড়া রাত: এনরিকের আবেগ, দেজিরের উত্থান

এক যুগান্তকারী রাত পেরিয়ে ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলে নিজের নাম চিরস্থায়ী করে নিল প্যারিস সেইন্ট-জার্মেইন (পিএসজি)। শনিবার রাতে মিউনিখের আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় অনুষ্ঠিত উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে ইন্টার মিলানকে ৫-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়ে প্রথমবারের মতো ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতেছে ফরাসি ক্লাবটি।

এই ঐতিহাসিক জয়ের রাতে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন পিএসজির স্প্যানিশ কোচ লুইস এনরিকে। ম্যাচ শেষে তাকে দেখা যায় একটি বিশেষ টি-শার্ট পরে, যেখানে ছিল তার প্রয়াত কন্যা জ্যানার ছবি। জয়ের পর স্টেডিয়ামে সমর্থকদের একটি বিশাল ব্যানারে ফুটিয়ে তোলা হয় বাবা-মেয়ের আবেগঘন মুহূর্ত। স্মৃতিতে চোখে জল আসে এনরিকের।

"আমি খুবই খুশি। সমর্থকদের ভালোবাসা দেখে আবেগ ধরে রাখতে পারিনি। মেয়েকে সবসময় মনে পড়ে," বলেন তিনি ম্যাচ পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায়।

২০১৫ সালে বার্সেলোনার কোচ হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয় করেছিলেন এনরিকে। এবার পিএসজিকে চ্যাম্পিয়ন করে গড়লেন নতুন রেকর্ড—দুটি ভিন্ন ক্লাবের হয়ে ইউরোপ সেরা হয়েছেন মাত্র ষষ্ঠ কোচ হিসেবে।

দেজিরে দুয়ে: ভবিষ্যতের তারকা আজকের নায়ক


পুরো ম্যাচজুড়ে পিএসজির আক্রমণের মূল কারিগর ছিলেন ১৯ বছর বয়সী দেজিরে দুয়ে। প্রথম গোলের সুযোগ তৈরি থেকে শুরু করে নিজে দুটি গোল করে ফাইনালের ইতিহাসে নিজের নাম লেখান এই তরুণ। ম্যাচের ৬৩তম মিনিটে দ্বিতীয় গোল করে পিএসজির জয়ের পথে বড় এক ধাপ বাড়ান তিনি।

চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে তিনটি গোলে সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়া তিনিই প্রথম খেলোয়াড়—দুটি নিজে করেছেন, একটি করিয়েছেন। মাত্র ১৯ বছর ৩৬২ দিনে ইউরোপীয় শীর্ষ আসরে জোড়া গোল করা সবচেয়ে কমবয়সী খেলোয়াড় এখন দেজিরে, ছাড়িয়ে গেছেন ইউসেবিওর রেকর্ডও।

পিএসজির দলীয় কৃতিত্ব, ভবিষ্যতের ইঙ্গিত


ম্যাচজুড়ে পিএসজির খেলা ছিল চোখধাঁধানো। দ্রুতগতির, প্রাণবন্ত ফুটবল খেলেছে তারা। দ্বিতীয়ার্ধে আরও দুটি গোল করে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৫-০। এই জয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়লাভকারী দল হিসেবে রেকর্ড গড়ল প্যারিসের ক্লাবটি।

তরুণ খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া দলটি আগে ম্যানচেস্টার সিটি, লিভারপুল, আর্সেনাল ও অ্যাস্টন ভিলার মতো জায়ান্টদের হারিয়ে ফাইনালে উঠে আসে।

ক্লাব প্রেসিডেন্ট নাসের আল খেলাইফি বলেন, "এই মৌসুম আমাদের ইতিহাসের সেরা। আমাদের পরিকল্পনা ভবিষ্যতের দিকে। আজকের জয় আমাদের বিশ্বাসকে আরও মজবুত করল।"

তিনি আরও জানান, "সমালোচনা এসেছে, কষ্টও হয়েছে। কিন্তু লক্ষ্য থেকে সরে যাইনি। আজ প্রমাণ হয়েছে—আমাদের আছে বিশ্বসেরা কোচ, তরুণ প্রতিভা আর নিবেদিত সমর্থক।"

ইন্টার মিলানের দুঃস্বপ্নের রাত


ইন্টার মিলানের জন্য এই হার কেবল ট্রফি হারানো নয়, বরং পুরো স্কোয়াড নিয়ে নতুন করে ভাবার ইঙ্গিত। অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া দলটি পিএসজির তারুণ্য আর গতি সামলাতে পারেনি। ম্যাচ যত গড়িয়েছে, ততই ক্লান্ত মনে হয়েছে তাদের।

তাদের শুরুর একাদশের গড় বয়স ছিল ২৯, যেখানে পিএসজির গড় বয়স ছিল মাত্র ২৩। চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে এক ম্যাচে তিনজন ৩৬ বছর বয়সী খেলোয়াড় মাঠে নামানো দল হিসেবে ইন্টার তৈরি করেছে অনাকাঙ্ক্ষিত এক রেকর্ড।

কোচ সিমোনে ইনজাগির ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠছে। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, "আমার খেলোয়াড়রা সম্মান পাওয়ার যোগ্য। তারা তাদের সর্বোচ্চ দিয়েছে।"

তবে তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি, তিনি ক্লাব বিশ্বকাপে দলের দায়িত্বে থাকবেন কিনা।

Previous Post Next Post