দাঁড়িপাল্লা নিয়ে ফিরছে জামায়াত? নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার রায় আপিল বিভাগের

দৈনিক রূপরেখা প্রতিবেদন 
প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৫


বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিল, তা বাতিল ঘোষণা করেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। ফলে দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে নিবন্ধন ফিরে পেলো দলটি। নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) জামায়াতের নিবন্ধন পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। তবে দলের প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের বিবেচনায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

২০২৫ সালের ১ জুন (রবিবার) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এই ঐতিহাসিক রায় প্রদান করেন। আদালতের এই রায়ের মাধ্যমে ২০১৩ সালে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিপরীতে জামায়াতের নিবন্ধন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলো।


জামায়াতের প্রতিক্রিয়া

রায় শেষে জামায়াতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির জানান,

“এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চলা আইনি লড়াইয়ের অবসান ঘটলো। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলার মাধ্যমে জামায়াতের নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। আজকের রায়ের মাধ্যমে বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং অংশগ্রহণমূলক সংসদ গঠনের পথে একটি বড় পদক্ষেপ নেওয়া হলো।”

তিনি আরও বলেন,

“আমরা আশা করি, এই রায়ের ফলে একটি সুষ্ঠু ও প্রাণবন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিক তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। জামায়াত নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী নিবন্ধন এবং প্রতীক বুঝে পাবে বলে আমরা আশাবাদী।”


আপিল বিভাগে শুনানি ও আইনজীবী দল

এই মামলায় জামায়াতের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিক এবং তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার ইমরান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, অ্যাডভোকেট শিশির মনির, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন প্রমুখ।
আদালতে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।


ঘটনার পেছনের প্রেক্ষাপট

২০১৩ সালের ১ আগস্ট, হাইকোর্ট এক রায়ে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করে।

২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর, নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে দলটির নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াত আপিল করে, যা ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে ‘ডিসমিস ফর ডিফল্ট’ হিসেবে খারিজ হয়ে যায়, মূল আইনজীবীর অনুপস্থিতির কারণে।

পরবর্তীতে দলটি পুনরুজ্জীবন আবেদন করে এবং আপিল বিভাগ তা গ্রহণ করে।

২০২৪ সালের ১২ মার্চ আপিল শুনানি শুরু হয় এবং ১৪ মে শুনানি শেষ হয়।

অবশেষে ১ জুন দেওয়া হয় চূড়ান্ত রায়, যেখানে হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দলটির নিবন্ধন ফিরিয়ে দিতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

Previous Post Next Post