আজ সেই স্মরণীয় দিন—যেদিন পীর শাহ মুহাম্মদ মোহেব্বুল্লাহ (রহ.) পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরম সত্যের পথে যাত্রা করেন। তিনি ছিলেন বাংলার আধ্যাত্মিক আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্র, ইসলামের নিবেদিতপ্রাণ খাদেম এবং শান্তির বাণীবাহক। তাঁর জীবন ছিল জ্ঞান, ইবাদত ও মানবসেবায় পূর্ণ।
প্রাথমিক জীবন ও বংশমর্যাদা
পিরোজপুর জেলার ছারছীনা গ্রামে ১৩৫৭ বঙ্গাব্দে (১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শাহ আবু জাফর মুহাম্মদ সালেহ (রহ.) ছিলেন একজন বিশিষ্ট আলেম ও সুফি। শৈশব থেকেই তিনি পিতার সান্নিধ্যে আধ্যাত্মিক শিক্ষা লাভ করেন।
পরিবার ও আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার
১৯৮০ সালে তিনি ফুরফুরা শরিফের পীর হযরত মাওলানা আবুল আনসার মুহাম্মদ আব্দুল কাহহার সিদ্দিকী (রহ.)-এর কন্যাকে বিবাহ করেন।
তাঁর পরিবার:
-
বড় পুত্র: শাহ আবু নছর নেছারুদ্দীন আহমেদ হোসাইন (মা.জি.আ.), ছারছীনা দরবার শরিফের দায়িত্বে।
-
দ্বিতীয় পুত্র: শাহ আবু বকর মুহাম্মদ সালেহ নেছারুল্লাহ, দ্বীনের খেদমতে নিয়োজিত।
-
তিন কন্যা ও জামাতাগণ: ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত ও দ্বীন প্রচারে সক্রিয়।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও ঐতিহাসিক সম্মান
১৯৯৯ সালে ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের বিশেষ প্রতিনিধি তাঁকে “মোহেব্বুল্লাহ ওয়া মোহিব্বুদ্দীন ওয়া মোহিব্বুল মোস্তফা” বলে অভিহিত করেন। এ স্বীকৃতি ছারছীনা দরবারের মর্যাদা আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে।
সাহিত্যকর্ম: ইসলামি জ্ঞানের ভাণ্ডার
তাঁর কিছু উল্লেখযোগ্য রচনাবলী:
-
মিলাদ শরিফ ও বারো চাঁন্দের ফজিলত
-
খুতবায়ে ছালেহিয়া
-
চল্লিশ হাদিস
-
চারি তরিকার শাজরা
-
মুসলিম বাল্য শিক্ষা
মুজাদ্দিদে জামান ও শরিয়তের সমুদ্র
তিনি ছিলেন যুগসংস্কারক (মুজাদ্দিদে জামান)। ফুরফুরা শরিফ তাঁকে “বাহরে শরীয়ত” উপাধিতে ভূষিত করেন।
সমাজসেবা ও মানবিক উদ্যোগ
-
১৯৯৮, ২০০০, ২০০৪ ও ২০০৭ সালের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ কার্যক্রম
-
রোহিঙ্গা, ফিলিস্তিন ও তুরস্কের বিপর্যয়ে মানবিক সহায়তা
-
বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে ২৫০০+ মাদরাসা প্রতিষ্ঠা
ইন্তেকাল ও চিরন্তন উত্তরাধিকার
১০ মহররম, পবিত্র আশুরার রাতে তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর জানাজায় লাখো মানুষের উপস্থিতি ছিল। তাঁর প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও ইসলামের খেদমতে নিয়োজিত।
একটি জীবন্ত আদর্শ
“ইলম, আমল ও খেদমতের সমন্বয়েই পূর্ণতা পায় মুমিনের জীবন।”
তাঁর রূহানি আদর্শ আজও লক্ষ মানুষের পথনির্দেশক।
আল্লাহ তাঁর রূহকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করুন। আমিন।
