রূপরেখা প্রতিবেদন
প্রকাশঃ ০১ জুন ২০২৫
ঈদুল আযহা ইসলামের অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ উৎসব, যা হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর ত্যাগ ও আত্মসমর্পণের স্মরণে উদযাপন করা হয়। এই উৎসবের প্রধান ইবাদত হলো কুরবানী। কিন্তু অনেকের মনে প্রশ্ন দেখা দেয় —
“কুরবানী করা কি ওয়াজিব, না কি এটি শুধুমাত্র একটি সুন্নত ইবাদত?”
এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করে কুরআন, হাদীস এবং চার মাযহাবের ইমামদের ব্যাখ্যার ওপর। আসুন কুরআন, হাদীস ও ফিকহের আলোকে এই বিষয়টি বিস্তারিতভাবে বুঝে নিই।
কুরআনের আলোকে কুরবানীর নির্দেশ
❖ সূরা কাওসার:
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
“অতএব আপনি আপনার প্রভুর উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করুন এবং কুরবানী করুন।”
— (সূরা কাওসার, আয়াত: ২)
🔍 এই আয়াতে "নহার" শব্দটি দ্বারা কুরবানী বোঝানো হয়েছে। এটি একটি স্পষ্ট নির্দেশ, যা কুরবানীর অপরিহার্যতা প্রমাণ করে।
❖ সূরা হাজ্জ:
وَلِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنسَكًا لِّيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّنۢ بَهِيمَةِ الْأَنْعَـٰمِ
“আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কুরবানীর নিয়ম নির্ধারণ করেছি, যেন তারা নির্দিষ্ট পশু জবাইয়ের সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করে।”
— (সূরা হাজ্জ, আয়াত: ৩৪)
لَن يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَـٰكِن يَنَالُهُ ٱلتَّقْوَىٰ مِنكُمْ
“তাদের গোশত বা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না; বরং তোমাদের তাকওয়াই পৌঁছে যায়।”
— (সূরা হাজ্জ, আয়াত: ৩৭)
🔍 এই আয়াতে বোঝানো হয়েছে, কুরবানীর মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর প্রতি খালেস তাকওয়া ও আনুগত্য প্রকাশ করা।
হাদীসের আলোকে কুরবানীর গুরুত্ব
❖ রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
"যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।"
— (ইবনু মাজাহ, হাদিস: ৩১২৩)
❖ হাদীসে এসেছে:
"আদম সন্তান কুরবানীর দিন যা কিছু করে, তার মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় হলো কুরবানী করা।"
— (তিরমিযী, হাদীস: ১৪৯৩)
❖ হযরত আনাস (রা.) বলেন:
"রাসূলুল্লাহ (সা.) দুইটি সাদা-কালো দাগযুক্ত, শিংওয়ালা, সুস্থদেহী মেষ কুরবানী করতেন এবং নিজের হাতে জবাই করতেন।"
— (বুখারী, হাদিস: ৫৫৫৮; মুসলিম: ১৯৬৬)
🔍 এসব হাদীস প্রমাণ করে যে, কুরবানী একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা রাসূল (সা.) নিজে পালন করতেন এবং উম্মতের প্রতি উৎসাহ দিতেন।
ফিকহবিদদের দৃষ্টিকোণ
হানাফি মাযহাব:
হানাফিদের মতে, কুরবানী করা ওয়াজিব। এটি না করায় গোনাহ হবে। ওয়াজিব হওয়ার জন্য মূল শর্তগুলো হলো:
-
মুসলিম, বালেগ ও মুকীম হওয়া
-
ঈদের দিনগুলিতে জীবিত থাকা
-
নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া
অন্যান্য মাযহাব (মালিকি, শাফেয়ি, হাম্বলি):
এই তিন মাযহাবের অধিকাংশ আলেম বলেন, কুরবানী মুয়াক্কাদাহ সুন্নত, অর্থাৎ এমন একটি সুন্নত যা রাসূলুল্লাহ (সা.) নিয়মিত পালন করেছেন এবং তা না করাকে অনুৎসাহিত করেছেন।
কুরবানী ওয়াজিব না সুন্নত — সংক্ষিপ্ত তুলনা
| মত | কুরবানীর অবস্থান | ব্যাখ্যা |
|---|---|---|
| হানাফি | ওয়াজিব | নির্দিষ্ট শর্ত পূরণকারী মুসলমানের জন্য আবশ্যক |
| শাফেয়ি, মালিকি, হাম্বলি | সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ | অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, নিয়মিত পালনযোগ্য |
