রূপরেখা প্রতিবেদন
প্রকাশঃ ৩১ মে ২০২৫
সৌদি আরব বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মিশরসহ মোট ১৪টি দেশের জন্য ‘ব্লক ওয়ার্ক ভিসা’ কোটা সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। শুধু ব্লক ওয়ার্ক ভিসাই নয়, সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ব্যবসা, ওমরাহ ও পারিবারিক ভিজিট ভিসার মতো আরও বেশ কয়েকটি ভিসা ক্যাটাগরি।
এই সিদ্ধান্তের ফলে হাজার হাজার প্রবাসী কর্মী এবং নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো পেশাগত ও আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কায় পড়েছে।
কোন কোন দেশের জন্য এই ভিসা স্থগিত?
সৌদি সরকারের ঘোষিত ভিসা স্থগিতাদেশের আওতায় রয়েছে নিম্নলিখিত ১৪টি দেশ:
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, নাইজেরিয়া, জর্ডান, আলজেরিয়া, সুদান, ইথিওপিয়া, তিউনিসিয়া, ইয়েমেন ও মরক্কো।
ব্লক ওয়ার্ক ভিসা কী?
‘ব্লক ওয়ার্ক ভিসা’ হলো একটি পূর্ব-অনুমোদিত ভিসা কোটা ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে সৌদি নিয়োগকর্তারা নির্দিষ্ট সংখ্যক বিদেশি নাগরিক নিয়োগের অনুমতি পান। এই কোটা অনুমোদন পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো বাছাইকৃত প্রার্থীদের জন্য ওয়ার্ক এন্ট্রি ভিসার আবেদন করতে পারে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক বিদেশি কর্মী সৌদি আরবে কাজের সুযোগ পেয়ে থাকেন।
নিষেধাজ্ঞার পেছনে কারণ কী?
সৌদি আরবের মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্ত ২০২৫ সালের হজ মৌসুমকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অংশ হিসেবে নেওয়া হয়েছে।
প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ হজে অংশ নিতে সৌদি আরবে যান, এবং অনেকেই পর্যটন, ব্যবসা বা ওমরাহ ভিসা নিয়ে গিয়ে হজ পালন করেন, যা হজ ব্যবস্থাপনাকে ব্যাহত করে।
এবারের ভিসা স্থগিতাদেশের মাধ্যমে এই প্রবণতা বন্ধ করতেই কর্তৃপক্ষ এমন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
নতুন ভিসা নীতিমালা
২০২৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এই ১৪ দেশের নাগরিকদের জন্য এক বছরের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসাও স্থগিত করা হয়েছে। এখন থেকে এসব দেশের ভ্রমণকারীরা শুধুমাত্র একবার প্রবেশযোগ্য (সিঙ্গেল এন্ট্রি) ভিসা পাবেন, যার মেয়াদ ৩০ দিনের বেশি হবে না।
বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য এর প্রভাব
সৌদি আরব বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। বর্তমানে প্রায় ২২ থেকে ২৫ লাখ বাংলাদেশি প্রবাসী সৌদি আরবে কর্মরত রয়েছেন। তারা মূলত নির্মাণ, পরিষেবা, কৃষি ও খুচরা বিপণনসহ বিভিন্ন খাতে কাজ করছেন।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে আসা রেমিট্যান্সের প্রায় ৪০ শতাংশ এসেছে সৌদি আরব থেকে। ফলে এই নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নিয়োগ সংস্থাগুলোর উদ্বেগ
বিভিন্ন নিয়োগ সংস্থা এবং জনশক্তি রপ্তানিকারকরা এই সিদ্ধান্তে উদ্বিগ্ন। তারা বলছেন, ভিসা কোটা বন্ধ হওয়ায় বহু শ্রমিক সৌদি আরবে পাঠানোর প্রক্রিয়া মাঝপথে আটকে গেছে, যার ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে।
অনেক কর্মী ইতোমধ্যেই মেডিকেল, পাসপোর্ট ও টিকিটের জন্য খরচ করে ফেলেছেন। এই ক্ষতিপূরণ কে দেবে তা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
সাময়িক পদক্ষেপ, না দীর্ঘমেয়াদি সংকট?
সৌদি কর্তৃপক্ষ এটিকে “সাময়িক পদক্ষেপ” হিসেবে ব্যাখ্যা করলেও, ভিসা নীতিমালার অনিশ্চয়তা এবং কোটা অনুমোদনের ধীরগতি বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির ভবিষ্যতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, হজ মৌসুম শেষে সৌদি আরব পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ভিসা নীতিতে আবারও পরিবর্তন আনতে পারে।
সৌদি আরবের সাময়িক এই নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের জন্য একটি বড় ধাক্কা। এর প্রভাব শুধু কর্মসংস্থানেই নয়, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও দেশের অর্থনীতিতেও পরবে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত দ্রুত কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে এই সমস্যার সমাধান করা।
.jpg)