দৈনিক রূপরেখা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২ জুন ২০২৫
প্রকাশ: ২ জুন ২০২৫
নগদের আড়াই হাজার কোটি টাকার লুটপাট ও অর্থপাচার সন্দেহে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত
বাংলাদেশের মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান নগদ নিয়ে বড় ধরনের দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেনসিক অডিট রিপোর্টে। সরকারি ভাতা থেকে শুরু করে ই-কমার্স লেনদেন, অবৈধ ই-মানি সৃষ্টি, এবং সন্দেহজনক শেয়ার লেনদেন—সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে উঠে এসেছে তদন্তে।
🔍 মূল অভিযোগসমূহ:
🎯 ১. সরকারি ভাতা লুটপাট
- ১,৭১১ কোটি টাকা আত্মসাৎ।
- ৪১টি অননুমোদিত ডিস্ট্রিবিউটরের মাধ্যমে সামাজিক সুরক্ষা খাতের অর্থ গরিবদের কাছে না পৌঁছে বেহাত হয়।
- মূল পরিকল্পনাকারী বলে অভিযোগ নগদের সাবেক এমডি তানভীর এ মিশুক ও তার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।
🛒 ২. ই-কমার্স লেনদেনের নামে প্রতারণা
- ১৪৪ কোটি টাকা ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জসহ বিভিন্ন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়।
- পরে গ্রাহকদের না জানিয়েই অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে টাকা আত্মসাৎ করা হয়।
💸 ৩. অবৈধ ই-মানি সৃষ্টি
- ৬৪৫ কোটি টাকা ই-মানি তৈরি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া।
- এর ফলে বাজারে অবৈধভাবে টাকা ঢুকিয়ে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
🌍 ৪. অর্থপাচারের আশঙ্কা
- ৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ করে এক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শেয়ার ইস্যু করে তা পরে কম মূল্যে বিক্রি করে দেয়।
- ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের নামে ৭০% শেয়ার হস্তান্তরের ঘটনায় মানি লন্ডারিংয়ের সন্দেহ।
🧾 ৫. ভুয়া রিপোর্টিং পোর্টাল
- বাংলাদেশ ব্যাংক ও ডাক বিভাগকে বিভ্রান্ত করতে একটি ম্যানুপুলেটেড রিপোর্টিং পোর্টাল ব্যবহার করা হয়, যার তথ্য মূল সার্ভারের সঙ্গে মেলে না।
⚖️ আইন লঙ্ঘন ও নিয়ন্ত্রণহীনতা
- ২০১৮ সালের নিয়ম অনুসারে শুধুমাত্র তফসিলি ব্যাংকগুলো এমএফএস চালাতে পারত।
- কিন্তু বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ২০১৯ সালে অনুমতি ছাড়াই “নগদ” চালু করে।
- ২০২০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক কেবল অন্তর্বর্তীকালীন অনুমোদন দেয়, যা ৯ বার মেয়াদ বাড়িয়ে এখন পর্যন্ত চলছে।
- এখনো “নগদ” পুরোপুরি আইনি কাঠামোর আওতায় আসেনি।
📊 এমএফএস বাজারে নগদের প্রভাব
- দৈনিক লেনদেন: ১,০০০+ কোটি টাকা
- বাজার শেয়ার: ১৮.৬৪% (দ্বিতীয় সর্বোচ্চ)
- গ্রাহক সংখ্যা: সাড়ে ৯ কোটির বেশি
🎤 বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্য
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন,
“গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় আমরা কোনো হস্তক্ষেপ করছি না। পরবর্তী আদেশের পরই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
✍️ পরিশেষে
নগদের বিরুদ্ধে উঠে আসা এইসব অভিযোগ শুধু একটি প্রতিষ্ঠান নয়, বরং বাংলাদেশের মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সেক্টরের নিয়ন্ত্রণ ও নৈতিকতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এখন দেখার বিষয়—নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও আদালত কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়।
